ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মানব মস্তিষ্কের সম্ভাব্য ধ্বংসের আশঙ্কা

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

পাংশা সংবাদ ২৪, ৯ মে ২০২৫: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) আমাদের জীবনকে অভূতপূর্বভাবে সহজ ও উন্নত করেছে। চিকিৎসা, শিক্ষা, যোগাযোগ থেকে শুরু করে শিল্প-বাণিজ্য—সব ক্ষেত্রেই AI এর অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু এই প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির পাশাপাশি উদ্বেগজনক প্রশ্ন উঠছে: ভবিষ্যতে AI কি মানব মস্তিষ্কের ক্ষতি বা ধ্বংসের কারণ হতে পারে? সাম্প্রতিক গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের মতামত এই আশঙ্কাকে আরও জোরালো করছে।

কীভাবে AI মানব মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে?
গবেষণায় দেখা গেছে, AI এর অতিরিক্ত নির্ভরতা মানুষের জ্ঞানীয় ক্ষমতার অবক্ষয় ঘটাতে পারে। ২০২৪ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, AI চ্যাটবটের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা মানুষের সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, সৃজনশীলতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটিকে “AI-প্ররোচিত জ্ঞানীয় অবক্ষয়” (AICICA) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি ‘ব্যবহার না করলে হারিয়ে যায়’ নীতির সঙ্গে তুলনীয়, যেখানে মানুষের মস্তিষ্কের মৌলিক ক্ষমতাগুলো অব্যবহৃত থাকলে দুর্বল হয়ে পড়ে।

মস্তিষ্ক-কম্পিউটার ইন্টারফেস (BCI) এর ঝুঁকি
মস্তিষ্ক-কম্পিউটার ইন্টারফেস (BCI) প্রযুক্তি, যা AI এর সঙ্গে সমন্বিত, মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে পারে। এটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের জন্য যুগান্তকারী হলেও ঝুঁকিমুক্ত নয়। গবেষকরা সতর্ক করেছেন যে, দীর্ঘমেয়াদি BCI ব্যবহার মস্তিষ্কের স্নায়ু সংকেতে পরিবর্তন আনতে পারে, যা স্মৃতিশক্তি বা আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া, AI-চালিত BCI-এর অপব্যবহারের ফলে মানসিক গোপনীয়তা লঙ্ঘন বা মস্তিষ্কের ডেটা হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি রয়েছে।

নিউরোম্যানিপুলেশনের সম্ভাবনা
ভবিষ্যতে AI-এর অগ্রগতি মানুষের মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অত্যাধুনিক AI অ্যালগরিদম মানুষের চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত হতে পারে। এই প্রযুক্তি যদি অসাধু হাতে পড়ে, তবে এটি মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা ও স্বায়ত্তশাসনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। এক্স-এর কিছু পোস্টে এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে AI-এর এই ধরনের অপব্যবহার মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব
AI-এর অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের সামাজিক মিথস্ক্রিয়া ও আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডিজিটাল প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, মনোযোগের ঘাটতি এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। ভবিষ্যতে, AI-চালিত ভার্চুয়াল সঙ্গী বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম মানুষের আবেগীয় বন্ধনকে দুর্বল করতে পারে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাতে পারে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে AI-এর দ্রুত প্রসার ঘটছে। তবে, এর নৈতিক ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত নীতিমালা এখনও গড়ে ওঠেনি। শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে AI টুলের অতিরিক্ত ব্যবহার তাদের সৃজনশীল চিন্তাভাবনা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এছাড়া, AI-এর অপব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্য সংকটকে আরও তীব্র করতে পারে, যা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা।

কী করা উচিত?
এই সম্ভাব্য বিপদ মোকাবিলায় সরকার, শিক্ষাবিদ এবং প্রযুক্তি উন্নয়নকারীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। AI-এর নৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় সৃজনশীল চিন্তাভাবনার উপর জোর দেওয়া জরুরি। এছাড়া, BCI এবং অন্যান্য AI প্রযুক্তির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

উপসংহার
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবজাতির জন্য অপার সম্ভাবনা বয়ে আনলেও এর অপব্যবহার মানব মস্তিষ্কের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। পাংশা সংবাদ ২৪ এই বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছে। আমাদের প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করতে হবে, কিন্তু সেই সঙ্গে মানব মস্তিষ্কের স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতা রক্ষা করতে হবে। শুধুমাত্র সচেতন ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই সম্ভাব্য বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *