মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, কোনো হাওর ইজারা দেওয়া উচিত নয় এবং হাওরে ইজারা বন্ধ করতে হবে। এর ফলে কী হবে বা না হবে, তা বিবেচনা করার অবকাশ নেই। হাওর সেখানকার মানুষের অধিকারের ক্ষেত্র এবং তা রক্ষা করাই আমাদের প্রধান কাজ।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) আয়োজিত ‘সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি ২০০৯ : হাওর অঞ্চলে বৈষম্য ও অব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি মূলত মাছ নিয়ে কাজ করার কথা ভেবেছিলেন। তবে, বিভিন্ন উৎস থেকে মাছ আসলেও হাওরের বিষয়টি যে এত গভীর, তা তিনি আগে বুঝতে পারেননি। হাওরে সরাসরি পরিদর্শনে গিয়ে তিনি উপলব্ধি করেন যে হাওর বাংলাদেশের এক অমূল্য সম্পদ। এখানে শুধু মাছই নয়, বিপুল প্রাণিসম্পদও বিদ্যমান।
তিনি আরও বলেন, হাওরকে ঘিরে একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা দীর্ঘকাল ধরে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এর ফলস্বরূপ সেখানকার ২৯ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। হাওরের প্রকৃত মালিক কারা—এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হাওরগুলো মূলত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। যদিও এর বেশিরভাগ অংশ ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছে, যারা কেবল ইজারা প্রদানের মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহ করে।
ফরিদা আখতার এই ইজারা প্রক্রিয়াকে অসংখ্য মানুষের অধিকার হরণের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। হাওর রক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে তিনি বিভিন্ন এলাকাকে অভয়াশ্রম ঘোষণার প্রস্তাব করেন, যার মাধ্যমে হাওরের মাছ এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি রক্ষা পাবে।
কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে নির্মিত অল ওয়েদার সড়ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই রাস্তাটি তৈরি করতে বিপুল অর্থ খরচ করা হয়েছে, যা সেই এলাকার পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি ডেকে এনেছে। তিনি মনে করেন, এই রাস্তা নির্মাণের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হওয়া উচিত।
মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে কারেন্ট জাল বন্ধ করার পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে চায়নাদুয়ারী নামক অবৈধ জালে মাছ ধরা হচ্ছে, যা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। তিনি মনে করেন, প্রকৃত জেলেরা এসব অবৈধ জাল ব্যবহার করে না; কিছু মৌসুমী মৎস্যজীবী এই কাজ করে থাকে।

