মানসিক চাপেই বাড়ছে ব্রণ-একজিমা! জেনে নিন মুক্তির সহজ উপায়

স্বাস্থ্য

অনলাইন ডেস্ক:

অফিসের কাজের চাপ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সন্তানের স্কুলের খরচ—নানা দুশ্চিন্তা আমাদের নিত্যসঙ্গী। এই মানসিক ও শারীরিক চাপ শুধু আমাদের মনকেই কাবু করে না, এর প্রভাব পড়ে আমাদের ত্বকের উপরেও। বাড়ে ব্রণের উপদ্রব, দেখা দেয় একজিমার মতো চর্মরোগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের মনের ভেতরের অনুভূতি প্রায়শই ত্বকের মাধ্যমে বাইরে প্রকাশ পায়।

ত্বকে ব্রণ বা চর্মরোগ দেখা দিলে তা লুকানো কঠিন। এর ফলে অনেকেই মানসিক অস্বস্তিতে ভোগেন, এমনকি সামাজিক জীবন থেকেও নিজেদের গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড মিস প্যালেটেবলের স্বত্বাধিকারী মুক্তা তেওয়ানি জানান, মানসিক চাপ ত্বকের স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে, বিশেষত যাদের একজিমা, সোরিয়াসিস বা সংবেদনশীল ত্বক রয়েছে।

শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি ব্রণ ও একজিমার মতো সমস্যাগুলি মানসিক অবস্থাকেও এমন জায়গায় নিয়ে যায়, যেখানে মানুষ ক্রমশ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে আত্মসম্মানবোধ কমে যাওয়া, হতাশা বা নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে।

মার্কিন অধ্যাপক মোহাম্মদ জাফারনি তার ‘হ্যান্ডবুক অব সাইকোডার্মাটোলজি’ গ্রন্থে দেখিয়েছেন, কীভাবে মানসিক চাপ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে তোলে। ফলে ত্বকের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও দুর্বল হয়ে পড়ে। এই দুর্বলতা নতুন জীবাণুর সংক্রমণ এবং আগে থেকে শরীরে থাকা নিষ্ক্রিয় জীবাণুগুলির পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠার পথ প্রশস্ত করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে ত্বকের ভারসাম্য রক্ষার প্রক্রিয়া ভেঙে পড়লে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিতে শুরু করে। দুবাইয়ের এক বিক্রয়কর্মী মেগান ক্লার্ক জানান, মানসিক চাপ বাড়লেই তার শরীরে চুলকানি শুরু হয় এবং একজিমা বেড়ে যায়।

দুবাইয়ের মনোবিজ্ঞানী মায়া গেরা বলেন, দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের রোগগুলি শরীরে এমন এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করে, যা অটোইমিউন ও অ্যালার্জি-সংক্রান্ত রোগগুলির জন্য ট্রিগার হিসেবে কাজ করতে পারে। মানসিক চাপে শরীর থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে কর্টিসোল নামক স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোন ত্বকের তেল গ্রন্থিগুলিকে উদ্দীপ্ত করে, ফলে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণের কারণে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে ব্রণ দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ শরীরে কর্টিসোলের মাত্রা বাড়িয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

তবে কিছু সহজ কৌশল অবলম্বন করে মানসিক চাপ মোকাবেলা করা এবং ত্বককে রক্ষা করা সম্ভব। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই উপায়গুলি:

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল:

১. নিয়মিত রিল্যাক্সেশন অভ্যাস করুন: গভীর শ্বাস নেওয়া, ধ্যান, যোগা বা মাইন্ডফুলনেস অনুশীলনের মাধ্যমে কর্টিসোল হরমোনের মাত্রা কমানো যায়।

২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন: ব্যায়াম শুধু মানসিক চাপ কমায় না, ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে ত্বককে উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর করে তোলে।

৩. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন: ঘুমের অভাব ত্বকের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি।

ত্বকের যত্ন নেওয়ার রুটিন:

১. ত্বককে হাইড্রেট রাখুন: পর্যাপ্ত জল পান করুন এবং ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

২. কঠিন উপাদানযুক্ত প্রোডাক্ট এড়িয়ে চলুন: মানসিক চাপের সময় ত্বক সংবেদনশীল থাকে, তাই মাইল্ড প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।

৩. সমস্যা অনুযায়ী পণ্য ব্যবহার করুন: ব্রণ বা লালচে ভাবের সমস্যা থাকলে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বা নিয়াসিনামাইড যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন:

১. স্ট্রেস কমায় এমন খাবার খান: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত মাছ খাদ্যতালিকায় যোগ করুন।

২. প্রদাহ বাড়াতে পারে এমন খাবার চিহ্নিত করুন: ক্যাফেইন, চিনি বা দুগ্ধজাত খাবার অনেকের ত্বকের সমস্যা বাড়াতে পারে।

৩. ত্বকে হাত দেওয়া এড়িয়ে চলুন: মানসিক চাপের সময় ত্বকে হাত দেওয়া বা ব্রণ খোঁটার প্রবণতা বাড়ে, যা সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

মানসিক ও ত্বকের সমস্যা সমাধানে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনা জরুরি। প্রয়োজনে ডার্মাটোলজিস্ট বা মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নিতে দ্বিধা করবেন না।

সূত্র: গালফ নিউজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *