অনলাইন ডেস্ক:
স্মার্টফোনের যুগে জন্ম নেওয়া প্রথম প্রজন্ম হলো জেনারেশন জেড বা জেন-জি, যাদের জন্ম ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে। সম্প্রতি এক নতুন গবেষণা বলছে, ভুল তথ্যে বিশ্বাস করার ঝুঁকিতে থাকা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রযুক্তি আশীর্বাদপুষ্ট এই জেন-জি প্রজন্ম অন্যতম। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া (ইউবিসি) এবং যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজের গবেষকদের একটি গবেষণা থেকে এই তথ্য উঠে এসেছে।
এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন দেশ ও প্রজন্মের মানুষের মধ্যে ভুল তথ্য কীভাবে ছড়াচ্ছে তা জানা। গবেষকদের লক্ষ্য ছিল না কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে অন্যদের চেয়ে বেশি বোকা প্রমাণ করা, বরং ভুল তথ্যের বিপদ সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হওয়া—যা জনস্বাস্থ্য, পৃথিবীর ভবিষ্যৎ এবং আধুনিক গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।
ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার মনোবিজ্ঞানী ফ্রেডরিখ গোয়েৎজ বলেন, “আমার মনে হয় না, সব গণতন্ত্র এই সমস্যা সমাধানে সত্যিকারের চেষ্টা করছে। আরও খারাপ বিষয় হলো, আমরা যে মেরুকরণকৃত পৃথিবীতে বাস করি সেখানে কিছু গোষ্ঠী, এমনকি রাজনীতিবিদরাও এটিকে জেনেশুনে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।”
ফ্রেডরিখ গোয়েৎজ আরও বলেন, “তবে, যদি কোনো সরকার সততার সঙ্গে এই সমস্যা সমাধান করতে চায়, তাহলে তারা এই গবেষণাটিকে সচেতনতা বাড়াতে এবং আরও বিস্তৃত গবেষণার দিকে যেতে ব্যবহার করতে পারে।”
গবেষকরা ২৪টি দেশের ৬৬ হাজার ২৪২ জনের ওপর একটি অনলাইন পরীক্ষা চালান। মনোবিজ্ঞানীদের তৈরি করা এই পরীক্ষাটির নাম ‘মিসইনফরমেশন সাসসেপটিবিলিটি টেস্ট (এমআইএসটি)’। কয়েক মিনিটের এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের খবরের শিরোনাম আসল নাকি নকল, তা চিহ্নিত করতে বলা হয়। পাশাপাশি বয়স, শিক্ষা এবং দেশ সম্পর্কেও কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা ভুল খবর বাছাই করার ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব ক্ষমতা কতটা, তাও জানতে চাওয়া হয়।
বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য খুব বেশি না থাকলেও, যাদের ‘আসল খবরকে নকল’ বা ‘নকল খবরকে আসল’ বলে চিহ্নিত করার আশঙ্কা বেশি ছিল তারা হলো জেন-জি প্রজন্মের সদস্য। এছাড়াও, যারা নিজেদের ‘অ-পুরুষ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যাদের শিক্ষা কম এবং যারা রাজনৈতিকভাবে বেশি রক্ষণশীল—তাদের ক্ষেত্রেও এই ঝুঁকি বেশি দেখা গেছে।
প্রজন্মগত দিক থেকে জেন-জির লোকজনদের ভুল তথ্যে বিশ্বাস করার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি। মিলেনিয়াল ও জেনারেশন এক্সের লোকজনের প্রবণতাও কাছাকাছি। তবে বেবি বুমার প্রজন্মের লোকজনদের ভুল তথ্যে বিশ্বাস করার প্রবণতা উল্লিখিত প্রজন্মের তুলনায় কম।
তবে এখানে একটি বিপরীত চিত্রও দেখা গেছে। ভুল তথ্য শনাক্ত করার ক্ষেত্রে জেনারেশন জেডের সদস্যরা অন্যান্য গোষ্ঠী বা প্রজন্মের লোকের তুলনায় নিজেদের শক্তি এবং দুর্বলতা সম্পর্কে ভালোভাবে সচেতন বলে প্রতীয়মান হয়েছে। রক্ষণশীলরাও তাদের নিজস্ব ক্ষমতা সম্পর্কে মোটামুটি সঠিক ধারণা রাখতেন। অন্যদিকে, উচ্চশিক্ষিত গোষ্ঠীগুলো আসল খবর থেকে নকল খবর আলাদা করার দক্ষতাকে বেশি বলে মনে করত।
গোয়েৎজ বলেন, “এখনো একটি প্রচলিত ভুল ধারণা আছে যে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বেড়ে ওঠা প্রজন্ম এগুলো ভালোভাবে বোঝে।” তিনি আরও যোগ করেন, “একাডেমিক দুনিয়ায় এটি বেশ কয়েক বছর আগেই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তবে আমার মনে হয় না, এটি জনসাধারণের কাছে পরিচিত কোনো ধারণা।”
গবেষকরা চান, ভুল তথ্য এবং এর মারাত্মক ক্ষতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সরকার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি কাজ করুক। এই গবেষণা মনে করিয়ে দেয় যে, খবরের শিরোনাম পড়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। এমনকি আপনি যদি মনে করেন আপনি বোকা নন, তবুও সতর্ক থাকা জরুরি।
ফ্রেডরিখ গোয়েৎজের ভাষায়, “আপনি যেই হোন না কেন, আপনি যাই জানেন বলে মনে করুন না কেন, ভুল তথ্য থেকে আমরা কেউই সম্পূর্ণ সুরক্ষিত নই। মানুষের এটা উপলব্ধি করা উচিত যে, আমরা সবাই নিয়মিত ভুল তথ্যের সংস্পর্শে আসছি এবং কোনো না কোনো সময়ে আমরা সবাই এর ফাঁদে পড়তে পারি।”

