ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সূচির দাবিতে বিএনপির একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সাথে আলোচনায় বসেছিল। তবে, এই আলোচনা শেষে উভয়পক্ষই ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছে, যা নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে তাদের দল মোটেও সন্তুষ্ট নয়। তাদের মতে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টার আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আলোচনা শেষে ভিন্ন সুর তুলেছেন। তিনি দাবি করেন, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে এবং বিএনপি তাদের উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর পেয়েছে।
এই পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গভীর মতভেদ রয়েছে। বিএনপি যেখানে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে, সরকার সেখানে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক আস্থা তৈরির ওপর জোর দিচ্ছে।
বিএনপির আশঙ্কা, নির্বাচন বিলম্বিত হলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তারা মনে করে, দীর্ঘসূত্রতা প্রশাসনের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করবে এবং জনগণের মধ্যে হতাশা বাড়াবে। পাশাপাশি, অর্থনৈতিক মন্দা ও আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
প্রধান উপদেষ্টা আলোচনার মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করলেও, সময়সূচির স্পষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আসিফ নজরুল অবশ্য জানিয়েছেন, নির্বাচন কোনোভাবেই জুনের পরে অনুষ্ঠিত হবে না। তিনি এটিকে পরিস্থিতি ও প্রস্তুতির ওপর নির্ভরশীল একটি সময়সীমা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, বিএনপির সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব রাজনৈতিক সমঝোতার পথ প্রশস্ত করেছে।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, সরকারের উচিত একটি নির্দিষ্ট ও স্বচ্ছ নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করা, যেখানে সময়সূচি, প্রস্তুতি ও নিরপেক্ষতার প্রতিশ্রুতি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। একইসঙ্গে, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া, যাতে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

