ড্রোন শো: আকাশে আলোর ক্যানভাসে বৈশাখের বর্ণিল বার্তা

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

প্রযুক্তি ডেস্ক, পাংশা সংবাদ

ঢাকার আকাশে পহেলা বৈশাখের রাতজুড়ে মাতিয়ে রাখে অভিনব এক প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পপ্রদর্শনী— ড্রোন শো। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আয়োজিত এই ইভেন্টে হাজারো দর্শক আকাশে ভেসে ওঠা আলোর নকশায় মুগ্ধ হন। বাংলাদেশে এই প্রথম এত বড় পরিসরে ড্রোন শোর আয়োজন করা হয়, যা প্রযুক্তি ও শিল্পের মেলবন্ধনে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

ড্রোন শো কী?

ড্রোন শো হলো একদল সিঙ্ক্রোনাইজড ড্রোনের সমন্বিত উড্ডয়ন, যা বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে আকাশে আলোকিত নকশা বা বার্তা ফুটিয়ে তোলে। প্রতিটি ড্রোনে লাগানো শক্তিশালী এলইডি লাইট এবং জিপিএস-সহ অন্যান্য সেন্সর ব্যবহার করে সুনির্দিষ্ট অবস্থান ও গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এর মাধ্যমে জটিল ছবি, লোগো, বা প্রতীকী দৃশ্য তৈরি করা সম্ভব। বিশ্বজুড়ে সুপার বোল, অলিম্পিকসহ বড় ইভেন্টে এই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে।

কীভাবে কাজ করে?

১. ডিজাইন ও প্ল্যানিং: প্রথমে গ্রাফিক ডিজাইন টিম আকাশে প্রদর্শিত হবে এমন ছবি বা অ্যানিমেশন তৈরি করে।
২. সফটওয়্যার কন্ট্রোল: বিশেষ অ্যালগরিদম প্রতিটি ড্রোনের গতি, উচ্চতা ও আলোর রং নির্ধারণ করে।
৩. রিয়েল-টাইম কমিউনিকেশন: রেডিও সিগন্যালের মাধ্যমে ড্রোনগুলোকে কমান্ড পাঠানো হয়। জিপিএস ও সেন্সর সহায়তায় তারা একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলাচল করে।
৪. লাইভ এক্সিকিউশন: অভিজ্ঞ পাইলটরা শো শুরুর আগে ব্যাটারি, আবহাওয়া এবং নিরাপত্তা চেকলিস্ট যাচাই করেন। সবকিছু ঠিক থাকলে ড্রোনগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আকাশে “জীবন্ত” শিল্পকর্ম তৈরি করে।

ঢাকার বৈশাখী শোয়ে যা ছিল

১৫ মিনিটের এই শোয়ে আকাশে ফুটে উঠেছিল বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও বৈশ্বিক সংহতির নানা প্রতীক:

  • মুক্তির প্রতীক: খাঁচা ভেঙে উড়ে যাওয়া পাখি।
  • আবু সাঈদ ও মীর মুগ্ধ: ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের শহীদদের স্মরণ।
  • নারীর ক্ষমতায়ন: বিপ্লবে নারীর অংশগ্রহণের দৃশ্য।
  • শাপলা ফুল: জাতীয় প্রতীকের আলোকিত উপস্থাপন।
  • ফিলিস্তিনি সংহতি: গাজায় শান্তির বার্তা।
  • বন্ধুত্বের ৫০ বছর: বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের স্বর্ণজয়ন্তীর প্রতিচ্ছবি।

কারিগরি সহায়তা: চীনা দূতাবাসের টেকনিক্যাল পার্টনারশিপে ২,৬০০টি ড্রোন ব্যবহার করে ১২টি মোটিফ ফুটিয়ে তোলা হয়। আয়োজনে সহযোগিতা করে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।

ড্রোন শোর ভবিষ্যৎ

বাংলাদেশে এই প্রথম সফল ড্রোন শো আয়োজন প্রমাণ করে, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে গণসচেতনতা ও শিল্পপ্রদর্শনীকে নতুন উচ্চতায় নেওয়া সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে জাতীয় দিবস, বাণিজ্য মেলা বা কর্পোরেট ইভেন্টে ড্রোন শো জনপ্রিয়তা পাবে। তবে নিরাপত্তা, বিমান চলাচলের নিয়ম এবং পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করে এগোতে হবে বলে পরামর্শ দেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *